‘মিপ্পুর, মিপ্পুর’
‘দশ্যেগারো বারো মিপ্পুর’
‘শেওরা পারা কাজি পারা দশ্যেগারো বারো মিপ্পুর মিপ্পুর ........'
টিপ টিপ ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছে। রাত থেকেই আকাশটা কেঁদে চলছে অরিাম। কেঁদে কেঁদে হয়ত বুকটা হালকা করছে! আরও কতো কষ্ট জমে আছে ঐ আকাশটার বুকে কে জানে! এর মধ্যেই সেই কাক ভোর থেকে একটা ছাতা মাথায় দিয়ে আজিমপুর বাস স্টান্ডে দাঁড়িয়ে আছে নুরা পুলিশ। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পিচ-ঢালা পথে বৃষ্টির পতন দেখছে ঘোর লাগা চোখে।
আস্তে আস্তে বেলা কিছুটা বাড়লেও শ্রাবণের ঘণ কালো মেঘে ঢাকা দিন কতটা গড়িয়েছে বুঝা যাচ্ছে না। তার ওপর আজ আবার শনি বার। অধিকাংশ চাকরিজীবির ছুটির দিন। তাই লোকজনের আনাগোনা এই মুহূর্তে একদম নেই। কিছুক্ষণ হয় একটি বাস এসে দাঁড়িয়েছে। কোনো মানুষ জন না থাকেলেও বাসের হেলপার তারস্বরে চেচাচ্ছে:
‘মিপ্পুর, মিপ্পুর’
‘দশ্যেগারো বারো মিপ্পুর’
‘শেওরা পারা কাজি পারা দশ্যেগারো বারো মিপ্পুর মিপ্পুর ........'
বাস হেলপারের এই কথাগুলি নুরা পুলিশের মাথা্য় যেন সঙ্গিতের মূর্ছনা সৃষ্টি করে। বাসটি চলে যাওয়ার পরও হেলপারের কথাগুলি তার মাথায় আবর্তিত হতে থাকে। কিছুক্ষণ পর এই বৃদ্ধ মানুষটি নিজেই চেচাতে আরম্ভ করে,
‘মিপ্পুর, মিপ্পুর’
‘দশ্যেগারো বারো মিপ্পুর’
‘শেওরা পারা কাজি পারা দশ্যেগারো বারো মিপ্পুর মিপ্পুর ........'
না, নুরা পুলিশ এখন আর পুলিশে চাকরি করে না। প্রথম যৌবনে বড় সাধ করে দেশের সেবা করতে পুলিশের চাকরিতে ঢুকেছিল নুরুল হক নামের তখনকার টগেবগে জোয়ান ছেলেটি। সে অনেক বছর আগের কথা। সেই কারণেই এলাকার মানুষ তাকে এখনও নুরা পুলিশ বলেই ডাকে। তবে নুরুল হকের দেশ সেবার অভিজ্ঞতা সুখকর হয় নি। অনেক ঝড় ঝাপ্টার পর তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছিল। মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণ দেখিয়ে তাকে চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়। কিন্তু নুরুল হক ওরফে নুরা পুলিশ এটা মানতে নারাজ যে তার মাথায় কোনো সমস্যা আছে। তার ধারণা সমস্যাটা তার মাথায় না; বরং সমস্যাটা তার দিলে। নানান কিছু দেখে দেখে দিলটা তার ছিল্লা বিল্লা গেছে। সেখান থেকেই যতসব সমস্যার উদ্ভব।