• হামিদ অাহসান
    • শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৫, ০১:৩৯ অপরাহ্ন
    • বিষয়ঃ গল্প
    • দেখেছেঃ 2130 বার
    • মন্তব্যঃ 0 টি
    • পছন্দ করছেনঃ 0 জন

অনির্বচনীয় অনুভূতি ........ গল্প


অদিতির নীরব করে রাখা মুঠোফোনের স্ক্রীনে ক্রমাগত আলো জ্বলছে আর নিবছে। অদিতি তাকিয়ে আছে সে দিকে কিন্তু ফোনটা ধরছে না। ফোন দিচ্ছে তানহা। তার সহপাঠি। ক্রমাগত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। কারণ এখন তার তানহাদের বাসায় যাবার কথা ছিল। জন্মদিনের পার্টিতে আজ বান্ধবীদের দাওয়াত করেছে তানহা।

অদিতি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতই ছিল। কিন্তু সবকিছু নষ্ট করে দিল একটা মন্তব্য। অপমানে তার মনটা জঘন্যরকম খারাপ হয়ে আছে। ঠিক মন খারাপও বলা যায় না এটাকে। বরং বলা যেতে পারে মনটা তার ক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে। ইচ্ছে করছে জগৎ সংসারের সব কিছু ভেঙ্গেচুরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। তীব্র ঘৃণা আর ক্ষোভের মিশ্রণে এক অদ্ভুত অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এখন সে। তানহাকে একটা ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে, ‘সরি দোস্ত, আজ আসব না। সব শুনলে তুই রাগ করবি না নিশ্চিত জানবি।’ তারপর ফোনটা বন্ধ করে দেয়।

ঘটনার সূত্রপাত ফেসবুকে। দিনটি পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিন। তারা কয়েক বান্ধবী মিলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল যে, এদিন অনেক মজা করবে। সেই অনুযায়ী অনেক আনন্দ উল্লাসে বরণ করে নিয়েছে তারা ঋতুরাজ বসন্তকে। সবাই বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে খোঁপায় নানা রকম ফুল আর মাথায় বাহারি ফুলের টায়রা দিয়ে মনের মতো করে সাজুগুজু করে বের হয়েছিল। নানা অনুষ্ঠানে ঘুরাঘুরি করে প্রচুর ছবিও তুলেছে। তারপর বাছাই করা একটা ছবি ফেসবুকে আপলোড করে ক্যাপশন দিল:

‘আমরাই প্রতি ফাল্গুনে বসন্ত নামাই বাংলার বুকে ।’  

সেই স্টাটাসে ভয়ঙ্কর কুৎসিত একটা মন্তব্য করে বসল একজন। মন্তব্যটি এতটাই কুৎসিত আর অপমানজনক যে, অদিতির মনে হল যেন ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প আঘাত করে তার চারপাশটা লন্ডভন্ড করে দিল। ঠান্ডা মাথার মেয়ে বলে যার অনেক সুনাম অদিতির। কিন্তু তারও  ইচ্ছে করছিল ভয়ঙ্কর কিছু একটা করতে।

ঘটনার সূত্রপাতটা হয় এভাবে। ফেসবুকে অদিতির সেই ফটোস্টাটাসটা দেওয়ার প্রায় সাথে সাথেই তার বন্ধু, অতিপ্রিয় একজন মানুষ, তার সহপাঠি সৈকত মন্তব্য করে, ‘নাইস’।

‘তুমি বুঝ নাইস কী? তুমি তো শালা একটা জড় পদার্থ! আমি নাইস হলেই তোমার কী, আর আগলী হলেই তোমার কী? তুমি সবকিছুতেই নিস্পৃহ থাকার ভান কর। আসলে তুমি একটা মিচকা ভুত। ভাল ছাত্রের তকমা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে তুমি বেশি ভালবাসো! পড়াশোনার বাইরের জগৎ সংসার নিয়ে তুমি একেবারেই নিস্পৃহ থাকার ভান করো। আমি বুঝি সবই!’ বন্ধুর মন্তব্যটা দেখে মনে মনে এসব এই কথাগুলি বলছিল অদিতি।

মূলত সে যাকে জড় পদার্থ ডাকে সেই বন্ধুটি ফটো-স্টাটাসটা দেখে কোনো মন্তব্য করে কিনা সেটা নিয়ে তার একটা আগ্রহ ছিল। মন্তব্যটা পেয়ে অনেক খুশি হয়ে যখন এটা সেটা নানা কিছু ভাবছিল ঠিক তখনই স্ক্রীনে ‘খচ্চরট লোকটার’ মন্তব্যটা ভেসে উঠল,

তোমাদের .. .. .. .. .. .. .. .. ?

মন্তব্যটা যে করেছে সে অদিতিদের পলিটেকনিক কলেজেরই ছাত্র। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত। অদিতির সাথে যা হয়েছে সেটা তো ভার্চুয়ালি হয়েছে।  কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এই লোক ক্যাম্পাসে মেয়েদের অম্মান করেছে কিন্তু তার কোনো প্রতিকার হয় নি। অদিতি তাই এবার একটা বিহিত করতে চায়। লোকটাকে দেখে কখনও ছাত্র মনে হত না অদিতির। চাচা মামাদের মতো মনে হত। অদিতিও ক্যাম্পাস ভিত্তিক নানা রকম সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তাই ক্যাম্পাসে নানা সময়ে ঐ ‘খচ্চর লোকটার’ সাথে তার দেখা হয়েছে নানা উপলক্ষে। ভদ্রতা সুলভ কথা-বার্তাও হয়েছে  দুএকবার। আজকের ঘটনা তাকে যেমন বিক্ষুব্ধ করেছে তেমনি আবার স্তব্ধও করে দিয়েছে।

অদিতি প্রথমেই গেল তাদের হলের ম্যাডামের কাছে যিনি নানা বিষয়ে সব সময় সেচ্চার থাকেন। কিন্তু ম্যাডাম তাকে হতাশ করে। ‘এড়িয়ে যাও অদিতি! তুমি তো জানো এদের ক্ষমতার উৎস। চিন্তার বিকৃতি আর জ্ঞানের দৈন্যতা এদের নিত্য সঙ্গী। এরা করতে পারে না এমন কোনো কাজ নেই।’

‘তাই বলে ক্যাম্পাসে এদেরকে যা খুশি করতে দিবেন’?

‘আমি তো একজন সামান্য শিক্ষক মাত্র। পুরো সিসটেম যদি কিছু করতে না চায় তাহলে আমি কী করতে পারি’?

‘কিন্তু ম্যডাম তাই বলে এভাবে এড়িয়ে গেলে চলবে কেন। আমার যতই এড়িয়ে যাব ওরা ততই সাহস পেতে থাকবে। ত্রিশ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে একটা দেশ আমরা পেয়েছি। এখন আমরা দেশটার সম্মান রক্ষা করতেও পার বা না!’। 

‘আমি তো দেখতে পাচ্ছি পরাজিত পাকিস্তানী আর তাদের সহযোগী রাজাকারদের প্রেতাত্মারাই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এক অশুভশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দলে নতুন করে জন্ম নিচ্ছে। এরা পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে।’ 

‘তাহলে আমরা যারা সচেতন আছি তাদের কিছু একটা করা উচিৎ নয় কি ম্যাডাম?’

‘উচিৎ তো অবশ্যই্। তারপরও আমি বলব, এড়িয়ে যাও অদিতি। এদের সামনে আমরাও অসহায়। আবারও বলি, পুরো সিসটেম না চাইলে আমরা কিছুই করতে পারব না’।

অদিতি চলে আসে ম্যাডামের রুম থেকে। হলের মেয়েরাও একই কথা বলে, এড়িয়ে যাও। কিন্তু অদিতির রাগ আর ক্ষোভ কমে না; বরং আরো যেন বাড়তে থাকে। অপমানটা সে কিছুতেই নিতে পারছে না। আর ঘটনা এটাই যদি প্রথম হত তাহলে না হয় এড়িয়ে যেত অদিতি। কিন্তু লোকটা ক্যাম্পাসে একের পর এক ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তার কিছুই হচ্ছে না। এটা মেনে নিতে পারছে না অদিতি।

পরদিন ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুরা সবাই চেষ্টা করে অদিতিকে হাসি খুশি রাখতে, গতকালের ঘটনাটা ভুলিয়ে দিতে।     কিন্তু আজ দু’দিন অদিতি ভুলতেই পারছে না ব্যাপারটা। অদ্ভুৎ এক ক্রোধ যেন খামচে ধরে তার মস্তিষ্কের সকল শিরা উপশিরা ছিঁড়ে ফেলতে চাচ্ছে যেন। মস্তিষ্কের ভেতর অনুভব করছে কেমন অচেনা এক অনুভূতি। বলে বুঝাতে পারবে না সে ব্যাপারটা। নিজের কাছেই তার এখন নিজেকে অচেনা লাগছে। তার মনে হচ্ছে প্রীতিলতার আত্মা তার দেহে প্রবেশ করে বলছে, “জাগো মেয়ে, প্রতিবাদ কর”। বেগম রোকেয়ার আত্মা যেন তাকে  বলে, ‘চুপ করে থেকো না মেয়ে। নির্ভয়ে আর নিদির্¦ধায় বাঁচার পথ তৈরী করে যাও নিজের জন্য - নারীর জন্য।’ আজ একদিন পর সেই অনুভূতিটা না কমে বরং আরও তীব্র হয়েছে। এই মুহূর্তে অদিতির যেন নিজেকেই নিজের ভয় করছে। তার মনে হচ্ছে এখনি সব কিছু ঊল্টে পাল্টে দিবে সে।   অদিতি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছে সে হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছে। সবার আগে সে হাতে হাতটা রেখেছে সৈকত; তারপর একে বন্ধুরা সবাই। তারপর এগিয়ে আসছে পুরো  কলেজ।     (অসমাপ্ত খসড়া)


  • Loging for Like
  • মোট পছন্দ করেছেন 0 জন
  • মন্তব্য 0 টি
  • গল্প


  • অাট কুঠুরি নয় দরজা
  • ট্রাফিক পুলিশ এবং বউ বনাম গাড়ি
  • এভাবেই হয়
  • অনির্বচনীয় অনুভূতি ........ গল্প
  • গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ১৪৫৩ বঙ্গাব্দ
  • খন্দকার অাবদুল মজিদ ও তাঁর রহস্যময় রাত

অাট কুঠুরি নয় দরজা

অদিতির নীরব করে রাখা মুঠোফোনের স্ক্রীনে ক্রমাগত আলো জ্বলছে আর নিবছে। অদিতি তাকিয়ে আছে সে দিকে কিন্তু ফোনটা ধরছে না। ফোন দিচ্ছে তানহা। তার সহপাঠি। ক্রমাগত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। কারণ এখন তার ত

ট্রাফিক পুলিশ এবং বউ বনাম গাড়ি

অদিতির নীরব করে রাখা মুঠোফোনের স্ক্রীনে ক্রমাগত আলো জ্বলছে আর নিবছে। অদিতি তাকিয়ে আছে সে দিকে কিন্তু ফোনটা ধরছে না। ফোন দিচ্ছে তানহা। তার সহপাঠি। ক্রমাগত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। কারণ এখন তার ত

এভাবেই হয়

অদিতির নীরব করে রাখা মুঠোফোনের স্ক্রীনে ক্রমাগত আলো জ্বলছে আর নিবছে। অদিতি তাকিয়ে আছে সে দিকে কিন্তু ফোনটা ধরছে না। ফোন দিচ্ছে তানহা। তার সহপাঠি। ক্রমাগত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। কারণ এখন তার ত

অনির্বচনীয় অনুভূতি ........ গল্প

অদিতির নীরব করে রাখা মুঠোফোনের স্ক্রীনে ক্রমাগত আলো জ্বলছে আর নিবছে। অদিতি তাকিয়ে আছে সে দিকে কিন্তু ফোনটা ধরছে না। ফোন দিচ্ছে তানহা। তার সহপাঠি। ক্রমাগত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। কারণ এখন তার ত

গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ১৪৫৩ বঙ্গাব্দ

অদিতির নীরব করে রাখা মুঠোফোনের স্ক্রীনে ক্রমাগত আলো জ্বলছে আর নিবছে। অদিতি তাকিয়ে আছে সে দিকে কিন্তু ফোনটা ধরছে না। ফোন দিচ্ছে তানহা। তার সহপাঠি। ক্রমাগত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। কারণ এখন তার ত

খন্দকার অাবদুল মজিদ ও তাঁর রহস্যময় রাত

অদিতির নীরব করে রাখা মুঠোফোনের স্ক্রীনে ক্রমাগত আলো জ্বলছে আর নিবছে। অদিতি তাকিয়ে আছে সে দিকে কিন্তু ফোনটা ধরছে না। ফোন দিচ্ছে তানহা। তার সহপাঠি। ক্রমাগত ফোন দিয়েই যাচ্ছে। কারণ এখন তার ত






চয়নিকা মননশীল সাহিত্যচর্চার একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র। এখানে প্রদত্ত প্রতিটি লেখার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ লেখকের নিজের।
Choyonika.com