• হামিদ অাহসান
    • সোমবার, ০৯ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন
    • বিষয়ঃ গল্প
    • দেখেছেঃ 1878 বার
    • মন্তব্যঃ 3 টি
    • পছন্দ করছেনঃ 0 জন

দুঃস্বপ্নের দশই নভেম্ববর . . . . . . . . রূপকথা


ডক ডক করে বোতল থেকেই বেশ অনেকটা পানি গিলে ফেললেন তিনি। আতঙ্কে তাঁর শরীর কাঁপছে। সেই ভয়ঙ্কর দু:স্বপ্নটা দেখে আজও ঘুমটা ভেঙ্গে গেল জননেতা চেঙ্গিস লংয়ের। মহলে তাঁর নিজের কক্ষে হালকা নীল নিয়ন আলো জ্বলছে। সেই আলোর সাথে মিল রেখে দেয়াল ঘড়ির নীল ডিজিটগুলো জানান দিচ্ছে সময় এখন রাত একটা বেজে বিশ মিনিট বত্রিশ সেকেন্ড। তিনি বেশ বুঝতে পারছেন আজ আর ঘুমুতে পারবেন না; অথচ সকালেই তার একটা বেইলি ব্রিজ উদ্ভোধন করতে যাওয়ার কথা। আজই প্রথম না; বরং বেশ কয়েক বছর ধরেই ঘটনাটা ঘটছে। দশ নভেম্বর রাতে ঘুমালেই তিনি এই দুঃস্বপ্নটা দেখেন। ফলে এই রাতে দু’ চোখের পাতা এক করতে পারেন না তিনি। ভয়ঙ্কর দু:স্বপ্নটা তাঁকে তাড়া করে, গলা চেপে ধরে। 

এবার আগেভাগেই সিঙ্গাপুরের ব্যক্তিগত চিকিৎসককে দেখিয়ে এসেছিলেন। কিছু ঔষধ দিয়েছিলেন ডাক্তার। বলেছিলেন, খেলে কড়া ঘুম হবে আর দুশ্চিন্তা থাকবে না। অনেক দিন তাঁর চিকিৎসা করেন এই ডাক্তার। কথায় কথায় ডাক্তার নিজ থেকেই বলে ফেলেছিলেন,

‘অনেক তো হল, এবার অবসর নেন না কেন?’ 

ডাক্তারের এমন যেচে উপদেশ দেওয়াটা পছন্দ হয়নি তাঁর। বিরক্ত হন তিনি। বিরক্তি ভেতরে চেপে রেখে মুখে বলেন,

‘আমি মনে করি এখনও আমার দেশকে, দেশের জনগনকে অনেক কিছু দেওয়ার বাকী আছে।  সাধারণ জনগণ তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। তাই আমি দেশের জন্য কাজ করে যেতে চাই জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত। আমার দক্ষ নেতৃত্ব আর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কথা সবাই জানে। আমার রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞার কাছে সবাই হার মানে।’

‘তার মানে আপনার কোহকাফ রাজ্যে দেশ চালানোর মতো মানুষের খুবই অভাব?’ বলেন ডাক্তার প্রফেসর কিম ইয়ং তুং।

এবার আর বিরক্তি চেপে রাখতে পারেন না চেঙ্গিস লং। চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠে বিরক্তির ছাপ। মুখে অবশ্য কিছু বলেন না। ডাক্তারের সৌম্য দর্শন, সুডৌল দৈহিক গঠন আর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের সামনে নিজের অস্তিত্বটাকে অনেক ম্লান মনে হয় তার। ডাক্তারও অবস্থা বুঝতে পেরে এনিয়ে আর কথা বাড়ায় না। 

স্বপ্নের মূল জায়গাটা ঠিক থাকলেও প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয় প্রতি বছর। যেমন আজ তিনি স্বপ্নে দেখছিলেন, এইমাত্র নির্বচনের চূড়ান্ত  ফলাফল এসেছে। তিনি আবারও বিজয়ী হয়েছেন। খুশিতে তার বাকবাকুম অবস্থা। লাখো সমর্থক বেষ্টিত হয়ে আছেন তিনি। জনতার মধ্য থেকে সমস্বরে মুহুর্মুহু শ্লোগান উঠছে,

“চেঙ্গিস লংয়ের চরিত্র, ফুলের মতো পবিত্র।”

“কী সুন্দর মালা গো, চেঙ্গিস লংয়ের গলায় গো।”

চেঙ্গিস লংয়ের গলায় সত্যি সত্যি নানা রকম ফুলের মালা শোভা পাচ্ছে। সেই অবস্থায়ই হ্যান্ড মাইক নিয়ে তিনি বক্তৃতা দিচ্ছেন,

‘প্রিয় জনতা! আপনাদের বিজয় সুচিত হয়েছে। আমি মনে করি এই বিজয় কেবল  আমার একার কিংবা আমার দলের নয়; এবিজয় জনগণের, এই বিজয় আপনাদের। আপনারা জানেন আর ক’দিন পরই শুরু হবে আমদের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনাদের এ নির্বচনী বিজয়কে আরও মহিমান্বিত করতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ১৬ ই ডিসেম্বর আমাদের নতুন সরকার শপথ গ্রহণ করবে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা! ১৬ ই ডিসেম্বর কেবল একটি পার্বন মাত্র নয়। ১৬ ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের দিন; এই বিজয়ের লাল-সবুজ ছবিটি আঁকতে কসাইয়ের বক্ষভেদী বুলেটবিদ্ধ ত্রিশ লক্ষ মানুষ ঢেলে দিয়েছে বুকের তাজা টকটকে লাল রক্ত। পুরো দেশটাই যেন বধ্যভূমি বানিয়েছিল কসাইরা। আমরা ভুলে যাইনি সে ইতিহাস। আমাদের এই সিদ্ধান্ত তারই প্রমাণ।

প্রজাতন্ত্রের প্রিয় প্রজাগণ! একাত্তর, ষোল, ছাব্বিশ, বায়ান্ন, একুশ, আজ বাঙ্গালীর গর্ব। এসব ধুমধামের সাথে পালন করা যেন ফ্যাশন মাত্র না হয়ে যায় সেদিকে আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আর ইতিহাস আমাদের জানতে হবে। আপনাদের সজাগ থাকতে হবে কেউ যেন সে ইতিহাস বিকৃত করতে না পারে; ‘বার মাসে তের পার্বন’ এর মতো এগুলি যেন আরো কয়েকটা পার্বনে পরিণত না হয়।  আমাদের সরকারও সেদিকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেই জন্যই ................।’

কথা শেষ করতে পারলেন না চেঙ্গিস লং। এরই মধ্যে উদোম গায়ের এক যুবক তার সামনে এসে দাঁড়ায়। মাথায় উষ্কখুষ্ক চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। বুকে সাদা অক্ষরে কী যেন লেখা রয়েছে আর আছে একটা ফুটা। সেই ফুটা দিয়ে গলগল করে বের হচ্ছে টাটকা লাল রক্ত। মুখ দিয়েও রক্ত বের হচ্ছে। টলতে টলতে সামনে এসে যুবকটি বলে,

‘আমার বুকটা ফুটা করে আত্মাটা বের করে আপনাদের হাতে দিয়েছিলাম নেতা। কিন্তু আপনারা কেউ কথা রাখেন নি।’

’কে তুমি? কী চাও?’ ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন রাজাধিরাজ  চেঙ্গিস লং । তাঁর আশপাশের সব মানুষ যুবকটিকে দেখেই মাথা নিচু করে চলে যেতে শুরু করে। যেন তারা ভীষণ লজ্জিত।

জবাবে যুবকটি তার বুক-পিঠের লেখাটা দেখায়। কিন্তু টাটকা রক্তে মাখা সাদা সে লেখাটা জননেতা রাজাধিরাজ চেঙ্গিস লং  অনেক চেষ্টা করেও পড়তে পারেন না। নাম জিজ্ঞেস করলে যুবকটি বলে, নুর হোসেন। কিন্তু চেঙ্গিস লং অনেক চেষ্টা করেও নামটি মনে করতে পারেন না। তাঁর কেবলই মনে হয় কোথায় যেন শুনেছেন এই নাম। কিন্তু কোথায় শুনেছেন মনে করতে পারেন না।

‘এখন আমাকে চিনতে পারছেন না নেতা! অথচ কাল সকালে আপনারাই পালন করবেন নুর হোসেন দিবস। আপনি নিজেও চটকদার বক্তৃতা দিবেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।’ কথাগুলো বলেই চেঙ্গিস লংয়ের গলা চেপে ধরে উদোম গায়ের যুবকটি। দম বন্ধ হয়ে আসে চেঙ্গিস লংয়ের । আর তখনই ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। দশই নভেম্বর রাতে ঘুমুতে পারেন না জননেতা চেঙ্গিস লং।  যতবার ঘুমুতে চেষ্টা করেন ততবারই এই দু:স্বপ্নটা দেখেন তিনি।


  • Loging for Like
  • মোট পছন্দ করেছেন 0 জন
  • মন্তব্য 3 টি
  • গল্প


  • অাট কুঠুরি নয় দরজা
  • ট্রাফিক পুলিশ এবং বউ বনাম গাড়ি
  • এভাবেই হয়
  • অনির্বচনীয় অনুভূতি ........ গল্প
  • গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ১৪৫৩ বঙ্গাব্দ
  • খন্দকার অাবদুল মজিদ ও তাঁর রহস্যময় রাত

অাট কুঠুরি নয় দরজা

ডক ডক করে বোতল থেকেই বেশ অনেকটা পানি গিলে ফেললেন তিনি। আতঙ্কে তাঁর শরীর কাঁপছে। সেই ভয়ঙ্কর দু:স্বপ্নটা দেখে আজও ঘুমটা ভেঙ্গে গেল জননেতা চেঙ্গিস লংয়ের। মহলে তাঁর নিজের কক্ষে হালকা নীল নিয়ন

ট্রাফিক পুলিশ এবং বউ বনাম গাড়ি

ডক ডক করে বোতল থেকেই বেশ অনেকটা পানি গিলে ফেললেন তিনি। আতঙ্কে তাঁর শরীর কাঁপছে। সেই ভয়ঙ্কর দু:স্বপ্নটা দেখে আজও ঘুমটা ভেঙ্গে গেল জননেতা চেঙ্গিস লংয়ের। মহলে তাঁর নিজের কক্ষে হালকা নীল নিয়ন

এভাবেই হয়

ডক ডক করে বোতল থেকেই বেশ অনেকটা পানি গিলে ফেললেন তিনি। আতঙ্কে তাঁর শরীর কাঁপছে। সেই ভয়ঙ্কর দু:স্বপ্নটা দেখে আজও ঘুমটা ভেঙ্গে গেল জননেতা চেঙ্গিস লংয়ের। মহলে তাঁর নিজের কক্ষে হালকা নীল নিয়ন

অনির্বচনীয় অনুভূতি ........ গল্প

ডক ডক করে বোতল থেকেই বেশ অনেকটা পানি গিলে ফেললেন তিনি। আতঙ্কে তাঁর শরীর কাঁপছে। সেই ভয়ঙ্কর দু:স্বপ্নটা দেখে আজও ঘুমটা ভেঙ্গে গেল জননেতা চেঙ্গিস লংয়ের। মহলে তাঁর নিজের কক্ষে হালকা নীল নিয়ন

গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ১৪৫৩ বঙ্গাব্দ

ডক ডক করে বোতল থেকেই বেশ অনেকটা পানি গিলে ফেললেন তিনি। আতঙ্কে তাঁর শরীর কাঁপছে। সেই ভয়ঙ্কর দু:স্বপ্নটা দেখে আজও ঘুমটা ভেঙ্গে গেল জননেতা চেঙ্গিস লংয়ের। মহলে তাঁর নিজের কক্ষে হালকা নীল নিয়ন

খন্দকার অাবদুল মজিদ ও তাঁর রহস্যময় রাত

ডক ডক করে বোতল থেকেই বেশ অনেকটা পানি গিলে ফেললেন তিনি। আতঙ্কে তাঁর শরীর কাঁপছে। সেই ভয়ঙ্কর দু:স্বপ্নটা দেখে আজও ঘুমটা ভেঙ্গে গেল জননেতা চেঙ্গিস লংয়ের। মহলে তাঁর নিজের কক্ষে হালকা নীল নিয়ন







  • Rabbani Chowdhury
    2015-11-09 11:14:40

    একটি উন্নত ও আলোচিত বিষয়ের উপর লেখা গল্পটি খুব ভালো লাগলো।  

    • অনেক ধন্যবাদ রব্বানী ভাই ...

      হামিদ অাহসান
      2015-11-09 16:11:50

  • Shanjedul Hassan
    2015-11-10 15:50:07

    yes

চয়নিকা মননশীল সাহিত্যচর্চার একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র। এখানে প্রদত্ত প্রতিটি লেখার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ লেখকের নিজের।
Choyonika.com