• হামিদ অাহসান
    • রবিবার, ০৮ নভেম্বর ২০১৫, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন
    • বিষয়ঃ গল্প
    • দেখেছেঃ 1838 বার
    • মন্তব্যঃ 2 টি
    • পছন্দ করছেনঃ 0 জন

খেলাঘর ................. গল্প


‘যত্ন না নিলে সম্পর্কগুলো ভাল থাকে না।  কত তুচ্ছ কারণে, সম্পর্কগুলো, স্বপ্নগুলো, চোখের সামনে তছনছ হয়ে যায়। বদলে যায় জড়িত মানুষগুলোর জীবনের গতিপথ’-মাদ্রিদে নিজের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে দেয়ালে ঝোলানো তার সাথে নিহার একটি সুন্দর মুহূর্তের হাস্যোজ্জ্বল ছবির দিকে তাকিয়ে এই কথাগুলোই ভাবছিল শফিক।

এই বাড়িটি ছেড়ে দিবে শফিক। আসবাবপত্র সব বিক্রি করে দিতে পত্রিকায় ছোট করে বিক্রয়-বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এদেশে কেউ বাসা বদল করলে কিংবা নতুনভাবে সাজাতে চাইলে পুরনো আসবাবপত্র ফেলে দেয়। তবে বর্তমানে অভিবাসীদের অনেকের মধ্যে  এই ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়ার একটা প্রচলন শুরু হয়েছে বটে। আবার এসবের ক্রেতাও দেখা যায় মূলত অভিবাসীরাই। হয়ত যাদের নতুন কেনার সামর্থ নেই তারাই  এসব পুরনো ব্যবহৃত জিনিসপত্র কম দামে কিনে নিয়ে ঘর সাজায়। শফিকও এক সময় অনেক যত্নে সাজিয়েছিল এই ঘর, এই সংসার। শফিক আর নিহা দু’জন মিলেই সাজিয়েছিল তাদের সুখের সংসারটি। সেই সাজানো সংসার এখন কেবলই স্মৃতি।

শফিক মাদ্রিদ এসেছিল অবৈধ অভিবাসী হিসেবে। প্রথমে দেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় আসে পর্তুগাল। সেখানে কিছু দিন থাকে। পড়াশোনা করে। তারপর এক পর্যায়ে সুযোগ মতো স্পেনে ডুকে যায়। মাদ্রিদ আসার পর তিন বছর লেগেছিল বৈধ কাগজপত্র পেতে। তারপর দুই বছর লাগে বউ নিহাকে নিয়ে আসতে।

নিহাকে যখন প্রথম নিয়ে আসে আসে তখন ছোট এক রুমের বাসা ছিল। বাসায় টিভি ছিল না। একদিন কাজ থেকে আসার সময় এক বাড়ির লনে দেখে একটা বিশাল টিভি পড়ে আছে। রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আর একটি কাগজে স্পেনিশ ভাষায় বড় বড় করে লেখা-Cualquiera puede tomarlo. Gratis. Buen estado' কেউ চাইলে নিতে পারো। বিনা মূল্যে। ভাল অবস্থায় আছে’। শফিক সেদিন টিভিটা নিয়ে এসেছিল। নিহা সব জেনে খুবই অবাক হয়েছিল। টিভি পেয়ে খুশি যেমন হয়েছিল তেমনি আবার বার বার সাবধান করছিল, দেখো, এসব জিনিস ধরতে গিয়ে আবার ঝামেলায় না পড়ো! 

আস্তে আস্তে শফিকের অবস্থার পরিবর্তন হয়। আগে অন্যের দোকানে কাজ করত এখন নিজেরই দুইটা দোকান হয়েছে। তাদের প্রথম সন্তান যখন নিহার পেটে আসে তখনই এই বাড়িটাতে উঠেছিল তারা। অনেক গোছানো মেয়ে নিহা। তাই বড়িটি সব সময়ই পরিপাটি করে সাজানো গোছনো থাকত। কিন্তু এখন একা নিজের জন্য আর এতো বড় বাড়ি দরকার নেই। তাই ছেড়ে দিবেবাড়িটি ।একারণেই বাড়িটির সব আসবাবপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে সে। নিজের জন্য এক রুমের একটা বাসা যতদিন খুঁজে না পায় ততদিন এখানকার বাংলাদেশি যারা ব্যাচেলর থাকে তাদের সাথে রুম শেয়ার করে থাকবে। 

যেদিন প্রথম যখন জানা গেল নতুন অতিথি আসছে তাদের পরিবারে তাদের সেকি আনন্দ! প্রথম সন্তান আগমনের অনুভূতি যারা মা-বাবা না হয়েছে তারা বুঝবে না। সন্তান নিহার পেটে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে আর তাদের দু’জনের ভালবাসাও যেন বাড়তে থাকে। দু’জন মিলে কতো আয়োজন, কতো পরিককল্পনা! কিন্তু এ আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হল না। আচমকাই আঁধার নেমে আসে সংসারে। রুটিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে ডাক্তার দিল এক ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ। আল্ট্রাসনোগ্রাম, রক্ত পরীক্ষাসহ যাবতীয় পরীক্ষায় জানা গেল শিশুটি প্রতিবন্ধি হিসেবে জন্মগ্রহণ করবে।

ডাক্তার তাদের বুঝাল, এই শিশুটি পৃথিবীতে আনলে কেবল কষ্টই পাবে। শিশুটি নিজে যেমন কষ্ট পাবে তেমনি তার বাবা-মার জন্য সেটা কষ্টদায়ক হবে। এবিষয়ে ডাক্তাররা তাদের ক্লাশ করালো এবং ভাববার সময় দিল।

সেই সময় তার আর নিহার ভেতরে তোলপাড় করছিল এক অনির্বচনী অনুভূতি। দিন-রাত্রী কাটছিল নিদ্রাহীন। ডাক্তাররা মনিটরে গর্ভস্থ শিশুটিকে দেখাচ্ছিল। তারা একাধিকবার দেখেছে শারীরিক কী কী ত্রুটি নিয়ে শিশুটি বেড়ে উঠছে। মনিটরে দেখে দেখে শিশুটির জন্য মায়া যেন আরও বেড়ে গেল। শফিকের মনে হচ্ছিল নিজ সন্তানকে সে নিজ হাতেই মেরে ফেলছে। তবে শেষপর্যন্ত তারা সেই সিদ্ধান্তই নিল যা শিশুটির জন্য এবং সবার জন্যই ভাল হবে। একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে চাঁর মাসের সময় মাতৃগর্ভেই শিশুটির হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেওয়া হল।

সেই দুঃস্বপ্নের সময়টায় শফিক আর নিহা মানসিকভাবে পরস্পরের ওপর খুবই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। দুঃস্বপ্ন এক সময় শেষ হয়। দুই বছর পরে তাদের একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম হয়। ছেলে সন্তান। ছেলেকে ঘিরেই তখন তাদের জীবন আবর্তিত হতে শুরু করে। বিকেলে ছেলেকে নিয়ে দু’জন বেড়াতে বের হয়। তাদের যৌথ চলনে বলনে কেবল চেনা মানুষেরাই নয় বরং পথচলতি মানুষও টের পায় তাদের মধ্যকার রসায়ন। বিকেলে বাইরে বের হলে আশ পাশের বয়স্ক মহিলারা তাদের খুঁজ খবর নেন, আশির্বাদ করেন। তাঁদের খুবই ফেভারিট হয়ে উঠে শফিক-নিহা জুটি আর তাদের বেবিটা।

পুত্রের নাম রেখেছিল রফিক। বাবার নামের সাথে মিল রেখে শফিকের ছেলে রফিক। শফিকের বয়স দু বছর হলে তারা সিদ্ধান্ত নেয় দেশে যাবে। অনেক দিন যাওয়া হয় না। কিন্তু  দেশে গিয়েই শুরু হয় ঝামেলার৷ তুচ্ছ কারণে স্বামী-স্ত্রী বিবাদে জড়িয়ে পড়ে।

তুচ্ছ একটা বিষয়। নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিলে এটা কোনো বড় সমস্যা না। শফিক চায় যতদিন দেশে থাকবে পরিবার নিয়ে নিজের মায়ের সাথে থাকবে। নিহা চায় তার মায়ের কাছে থাকতে। দুজনই অনড় থাকে নিজ নিজ সিদ্ধান্তে। দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন তাদের এই বিবাদে ইন্ধন যোগায় । শেষে দু'জন দুই বাড়িতে থাকে। এনিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে রাগের মাথায় একদিন নিহার পাসপোর্টসহ সব কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলে শফিক। এই জেদাজেদির শেষ পরিণতি হয় বিচ্ছেদ। ভেঙ্গে যায় বড় সাধের খোলাঘর। অতপর শফিক একাই ফিরে আসে মাদ্রিদ।


  • Loging for Like
  • মোট পছন্দ করেছেন 0 জন
  • মন্তব্য 2 টি
  • গল্প


  • অাট কুঠুরি নয় দরজা
  • ট্রাফিক পুলিশ এবং বউ বনাম গাড়ি
  • এভাবেই হয়
  • অনির্বচনীয় অনুভূতি ........ গল্প
  • গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ১৪৫৩ বঙ্গাব্দ
  • খন্দকার অাবদুল মজিদ ও তাঁর রহস্যময় রাত

অাট কুঠুরি নয় দরজা

‘যত্ন না নিলে সম্পর্কগুলো ভাল থাকে না।  কত তুচ্ছ কারণে, সম্পর্কগুলো, স্বপ্নগুলো, চোখের সামনে তছনছ হয়ে যায়। বদলে যায় জড়িত মানুষগুলোর জীবনের গতিপথ’-মাদ্রিদে নিজের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে

ট্রাফিক পুলিশ এবং বউ বনাম গাড়ি

‘যত্ন না নিলে সম্পর্কগুলো ভাল থাকে না।  কত তুচ্ছ কারণে, সম্পর্কগুলো, স্বপ্নগুলো, চোখের সামনে তছনছ হয়ে যায়। বদলে যায় জড়িত মানুষগুলোর জীবনের গতিপথ’-মাদ্রিদে নিজের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে

এভাবেই হয়

‘যত্ন না নিলে সম্পর্কগুলো ভাল থাকে না।  কত তুচ্ছ কারণে, সম্পর্কগুলো, স্বপ্নগুলো, চোখের সামনে তছনছ হয়ে যায়। বদলে যায় জড়িত মানুষগুলোর জীবনের গতিপথ’-মাদ্রিদে নিজের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে

অনির্বচনীয় অনুভূতি ........ গল্প

‘যত্ন না নিলে সম্পর্কগুলো ভাল থাকে না।  কত তুচ্ছ কারণে, সম্পর্কগুলো, স্বপ্নগুলো, চোখের সামনে তছনছ হয়ে যায়। বদলে যায় জড়িত মানুষগুলোর জীবনের গতিপথ’-মাদ্রিদে নিজের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে

গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ১৪৫৩ বঙ্গাব্দ

‘যত্ন না নিলে সম্পর্কগুলো ভাল থাকে না।  কত তুচ্ছ কারণে, সম্পর্কগুলো, স্বপ্নগুলো, চোখের সামনে তছনছ হয়ে যায়। বদলে যায় জড়িত মানুষগুলোর জীবনের গতিপথ’-মাদ্রিদে নিজের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে

খন্দকার অাবদুল মজিদ ও তাঁর রহস্যময় রাত

‘যত্ন না নিলে সম্পর্কগুলো ভাল থাকে না।  কত তুচ্ছ কারণে, সম্পর্কগুলো, স্বপ্নগুলো, চোখের সামনে তছনছ হয়ে যায়। বদলে যায় জড়িত মানুষগুলোর জীবনের গতিপথ’-মাদ্রিদে নিজের বাসার ড্রয়িং রুমে বসে







  • Rabbani Chowdhury
    2015-11-08 05:58:11

    স্পষ্ট বর্ণনায় ও সমাজের চলমান ধারার লেখা গল্পটি অনেক ভালো লাগলো, সংসারের যাত্রা হওয়া উচিত পারস্পারিক বোঝাপড়া ও সহনশীলতার মধ্য দিয়ে সঠিক দৃষ্টি দিয়ে।  অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানবেন হামিদ ভাই। 

    • অনেক ধন্যবাদ রব্বানী ভাই .....

      হামিদ অাহসান
      2015-11-08 10:14:24
চয়নিকা মননশীল সাহিত্যচর্চার একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র। এখানে প্রদত্ত প্রতিটি লেখার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ লেখকের নিজের।
Choyonika.com