এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করেই বাসায় বিয়ে করার বায়না ধরে বসল হাবু। আসল নাম হাবিবুর রহমান সরকার। হাবু বলেই ডাকে বন্ধুরা এবং বাসায়ও। বিয়ের সিদ্ধান্তের পক্ষে হাবু দুই দুইটা যুক্তি উপস্থাপন করে। প্রথমত তার গার্লফ্রেন্ডকে কিছু ছেলে জ্বালাতন করে, রাস্তাঘাটে উত্তক্ত করে। হাবুর যুক্তি হল, বিয়ে করে ফেললে তাকে আর কেউ জ্বালাতে আসবে না। দ্বিতীয়ত তার পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেজাল্ট বের হলে হাবুকে বিদেশ পড়তে পাঠিয়ে দিবে। তাই গার্লফ্রেন্ড ইস্যুটা এমন অনিশ্চিত রেখে সে বিদেশে পড়তে যেতে চায় না কিছুতেই। অবশেষে নানান নাটক আর অঘটন ঘটনের পর হাবুর বিয়েটা হয়েই গেল তার সেই গার্লফ্রেন্ডের সাথে।
বিয়ের পর একদিন হাবু তার বউকে নিয়ে বাইকে চড়ে ঘুরতে বের হয়েছে। বাসা থেকে বের হয়ে নিজেদের ব্লকের রাস্তাটা অতিক্রম করে কিছু দূর গিয়ে বড় রাস্তায় উঠতেই ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট তাকে থামালো। পথঘাটে কেউ ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করছে কিনা সেটা দেখাই তাদের কাজ। হাবু বুঝতে পারে না তারা কোন আইনটা ভঙ্গ করেছে। তারা দুজনেই হেলমেট পরে আছে। সে নিয়ম মেনেই বাইক চালাচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্রও ঠিক আছে। ‘কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা সেটা অবশ্য তাঁরা দেখতে চাইতেই পারে’-মনে মনে ভাবে হাবু।
যাই হোক হাবু বাইক থামিয়ে নেমে দাঁড়াল। তার পেছনে অনেকটা মুখ লুকানোর মতো করেই দাঁড়াল তার বউ। জিন্সের প্যান্টের ওপরে লং টপস পরা। শরীর থেকে এখনও কিশোরী কিশোরী ভাব দূর হয় নি। হাবুকে যে খুব তরুণ লাগছে তাও না। যদিও বয়স তার একুশ হয়ে গেছে।
রোদে ঝলসে যাওয়া কালো গায়ের রঙ সার্জেন্ট সাহেবের। তবে কেমন একটা বনেদি ভাব আছে। একবার হাবুর দিকে তাকায় আবার দেখে তার বউয়ের দিকে। মিটি মিটি হাসে। হাবুর কাছে তাকে বাংলা সিনেমার ভিলেইনের মতো লাগছে।
‘মাইয়াটা কে’? অবশেষে প্রশ্ন করে সার্জেন্ট সাহেব।
‘আমার ওয়াইফ’-স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দেয় হাবু। হাবুর মুখেও হাসি।
‘তোর আবার ওয়াইফও আছে!’ খুবই রূঢ় কণ্ঠে বলে সার্জেন্ট সাহেব। যেন হাবুর বউ থাকাতে তিনি খুবই বিস্মিত হয়েছেন। হাবু অবাক হয় সার্জেন্টের এমন ব্যবহারে। সে কোনো অন্যায় করে নি। তার সাথে কেন এমন তুইতোকারি করা হচ্ছে সে ভেবে পায় না! দেশের আইনে তাদের বিয়ে করার বয়স হয়েছে। বাবা মা তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। বিয়ে করে তারা কোনো অপরাধ তো করে নি।
‘কাগজপত্র বের করো!’ এবার তুমি সম্বোধনেই নির্দেশ দিলেন সার্জেন্ট সাহেব।
হাবু গাড়ির কাগজপত্র বের করে দিতেই সার্জেন্ট ধমকে উঠলেন, ‘গাড়ির কাগজ না, তোর বউয়ের কাগজ বের কর হারামজাদা।’
বাইকের কাগজপত্র ঠিকঠাক সাথে রাখলেও বউয়ের কাগজপত্রও সাথে সাথে রাখতে হবে সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। বিয়ের সময় কিছু কাগজপত্রে সে স্বাক্ষর করেছে বটে কিন্তু সেসব কিছুই তার কাছে নেই। কাগজপত্র যা আছে সব আছে তার বাবার কাছে। আবার সে এটাও ভেবে পায় না যে, বউ কি গাড়ি যে কাগজপত্র সাথে রাখতে হবে! তার বাবার গাড়ির কাগজপত্র থাকলেও বাবা-মার বিয়ের কাগজপত্র সে কখনও দেখে নি। হাবু মাথা চুলকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
‘কাগজ না থাকলে টাকা পয়সা কী আছে বের কর।’ সার্জেন্ট এবার ক্ষেপার মতো চেচিয়ে উঠে। হাবু মানিব্যাগ বের করে। ভেবেছিল এক হাজার টাকা দিবে। বাইকের সমস্যা হলে তো দুই শ’র বেশি দিত না। কিন্তু সার্জেন্ট তার হাত থেকে মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে টাকা পয়সা যা কিছু ছিল নিয়ে খালি মানিব্যাগটা ফেরত দেয়। তারপরও হাবু হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
সে যাত্রা মানি ব্যাগের উপর দিয়ে গেছে বিপদটা। তারপর থেকে হাবু তাদের বিয়ের কাগজপত্র চেয়ে নেয় বাবার কাছ থেকে। কখনও বউকে নিয়ে বের হলে বউ আর বাইক দুইটারই কাগজপত্র সাথে রাখে। ‘দেশে যেইটা নিয়ম’-ভাবে হাবু। যদিও ব্যাপারটা হাবুর বুঝে আসে না তারপরও কী আর করা! যে দেশে যে আইন, মানতে তো হবেই।