এই মুহূর্তে পৃথিবীর বহুল আলোচিত দেশটির নাম গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ। সংবাদ মাধ্যম, গবেষক-পর্যবেক্ষকদের অনুসন্ধানী দৃষ্টি এখন এখানে নিবদ্ধ। সাধারণ মানুষের আগ্রহেরও কেন্দ্রবিন্দুতে আছে দেশটি। এখানকার বিবাদমান অসংখ্য দল উপদল সবাইন দেশ মাতৃকার পবিত্র মাটি ছুঁয়ে শপথ নিয়ে একে অন্যের দিকে চাপাতি তাক করে আছে। সবারই এক কথা, শত্রু সম্পূর্ণ নির্মূল না করে ঘরে ফিরবে না।
অশীতিপর বৃদ্ধ ফয়সাল সাহেব কানাডায় নিজ বাসভবনের ড্রয়িং রুমে বসে এ নিয়ে সিএনএন টিভিতে সরাসরি প্রচারিত একটি রিপোর্ট দেখছেন। দীর্ঘ দিন হয় তিনি দেশ ছেড়ে কানাডায় বসবাস করছেন। এখন তিনি কানাডার নাগরিক এবং তার পরবর্তী দুই প্রজন্ম এখানেই বসবাস করছে। দেশে তার আপনজন কেউ আর বেঁচেনা থাকলেও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া সেই দেশটাকেই এখনও তার বড় আপন মনে হয়। তার অনেক প্রিয় সেই জন্মভূমির এমন অবস্থা দেখে তাঁর মনটা কেঁদে উঠে। হাহাকার উঠে বুকের ভেতরে।
সিএনএন টিভির রিপোর্টে দেখাচ্ছে কীভাবে আমেরিকান নোবেলজয়ী সাইকোলজিস্ট ও বিহেভিওরাল জেনেটিকস বিশেষজ্ঞ, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. হেজার্ডাস মোরালের নেতৃত্বে একটি দল এখানে গবেষণা করছে। সাইকোলজিস্ট ওবিহেভিওরাল জেনেটিকস বিশেষজ্ঞ হিসেবে ড. হেজার্ডাস মোরালের কাজের ক্ষেত্রটা হচ্ছে মানুষের মনস্তত্ব এবং চরিত্র ও আচার-আচরণে জিন ও পরিবেশগত প্রভাবকগুলো বিশ্লেষণ করা।
শুধুমাত্র গবেষণা নয় পাশাপাশি বিবাদমান দলগুলিকে নিবৃত্ত করতে মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকাও পালন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে হেজার্ডাস মোরালের দলটি। পাশাপাশি তারা নানা রকম শিক্ষামূলক ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছে। জাতিসংঘ বিরল প্রজাতির মনুষ্য সংরক্ষণ তহবিলের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত ড. হেজার্ডাস মোরালের এই মিশনে সামরিক সহযোগিতা দিচ্ছে জাতিসংঘ বাহিনীর ব্যানারে পরিচালিত ভারত-মার্কিন সামরিক জোট।
জাতিসংঘ বাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকা আলোচিত এই ব-দ্বীপটির সকল অস্ত্রভান্ডার সিজ করে দেওয়ার পরও পেট্রোল বোমা ও ককটেলের ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। রক্তপাত আর খুনোখুনি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। রিপোর্টিতে বলা হয়, এভাবে চলতে থাকলে এক সময় এখানকার বিশেষ বৈশিষ্টসম্পন্ন সব মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন।
সাইকোলজিস্ট ও বিহেভিওরাল জেনেটিকস বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রোফেসর ড. হেজার্ডাস এখানকার মানুষের মনস্তত্ব আর জেনেটি বৈশিষ্টগত আচরণ নিয়ে গবেষণা করে দেখান যে, রেনেসাঁ পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বে মানুষের জিনগত বৈশিষ্টে একটা বিষয়ে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এসময় মানুষ বিরুদ্ধ মত এবং পরমতে সম্মান করাটা ভালভাবে আয়ত্ব করে। ফলে হানাহানি না করে বৈচিত্রের মাঝে একত্বের ধারনার ভিত্তিতে নানা মতের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব হয়। এতে করে হানাহানিতে সময় নষ্ট না করে মানুষ জাগতিক উন্নতির দিকে নজর দেয় এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যাপক সাফল্য লাভ করে। কিন্তু ব্যাতিক্রম এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ। এখানকার মানুষের জিন একটা সময়রে পর আবার প্রাগৈতিহাসিক বন্যতার বৈশিষ্ট্য ফিরে পায়। সমস্যা চিহ্নিত করে ড. মোরাল সেগুলোর সমাধান নিয়ে কাজ করছেন বলেও রিপোর্টটিতে বলা হচ্ছে।
এই গবেষণার জন্যই প্রোফেসর ড. হেজার্ডাস মোরাল ২০৪৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল কমিটির যুক্তি হল, তার এই গবেষণা পৃথিবীর মানুষের মাঝে শান্তি বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। তাই তাকে শান্তিতে নোবেল দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে।
রিপোর্টটি দেখতে দেখতে চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল ফয়সাল সাহেবের। নিতান্ত একটা অজগ্রামে তার জন্ম। বিদ্যুৎ ছিল না, যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে তেমন কিছই ছিল না। কিন্তু কী এক শান্তি বিরাজ করত সেই শান্ত গ্রামটিতে। সব ধর্ম বর্ণ আর গোত্রের মানুষ কী এক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। কিন্তু সোনার দেশটার শেষে কেন এমন অবস্থা হল ভেবে পান না ফয়সাল সাহেব। কিন্তু এর জন্য কাকে দোষ দেবেন বুঝতে পারেন না তিনি। সারা জীবন তিনি ভাগ্যকে দোষ দেওয়ার বিরোধী ছিলেন।