• হামিদ অাহসান
    • বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৫, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন
    • বিষয়ঃ গল্প
    • দেখেছেঃ 1848 বার
    • মন্তব্যঃ 4 টি
    • পছন্দ করছেনঃ 0 জন

প্রত্যাবর্তন ..................গল্প


 স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিল ইউনাইটেড স্টেট এ। সেখানে  পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে মাস তিনেক হয় দেশে ফিরে এসেছে সায়মা। দেশে এসে একটা  চাকরীও নিয়েছে।  ঢাকার গুলশানে একটা প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকের  সিইও’র পার্সোনাল সেক্রেটারীর জব। সিভি পাঠিয়েছিল। তার সিভি দেখে তারা তাকে ডাকে এবং বলে আপনাকে আপাতত এই পোস্টটা দেওয়া যাবে। পরে আস্তে আস্তে আপনার যোগ্যতাই বলবে আপানি কোথায় যাবেন। সায়মা নিয়ে নেয় অফারটা।

চাইলেই সে আমেরিকাতেই ভাল একটা চাকরী যোগার করে নিতে পারত। সেই যোগ্যতা তার ছিল। কিন্তু নিজের দেশ ছেড়ে পরের দেশের বাসিন্দা হতে ইচ্ছে করছিল না তার। যারা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে আবার দেশের জন্য মায়া কান্না করে তাদের একদম পছন্দ করত না সে। নিজের মেধা ব্যায় হওয়া উচিত নিজের দেশের জন্য এমনটাই ছিল তার চিন্তা। ‘দেশ তোমাকে কী দিয়েছে, কতটুকু দিয়েছে তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হল দেশকে তুমি কী দিয়েছ এবং কী দেওয়ার আছে’-শিক্ষক বাবার এই উপদেশটি সব সময় মনে রেখে চলতে চেষ্টা করত সায়মা।

বাসা কলাবাগান আর অফিস গুলশান। বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব পাঁচ ছয় কিলোমিটারের মতো হবে। দশটা থেকে অফিস শুরু। রাস্তায় যানজটের কথা চিন্তা করে দুই ঘন্টা হাতে রেখে সকাল আটটায় কলা বাগান বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়াল সায়মা। একটাস পাবলিক বাস এলো একটু পরই। কিন্তু বাসটি স্ট্যান্ডে এসেও পুরোপুরি থামে না। বরঞ্চ ধীরে ধীরে এগোতে থাকে। দুয়েকজন নামল এই অবস্থায়ই। তারপর চলন্ত অবস্থাতেই হুরমুর করে উঠতে লাগল মানুষজন। 

সায়মাও দৌড়ে গিয়ে ডান পায়ের সামনের অর্ধেক বাসের দরজার ধাতব পাটাতনে রাখতে সক্ষম হয়। সাথে সাথেই ডান হাত দিয়ে বাসটির দরজার পাশের হ্যান্ডেলটা শক্তকরে ধরে ফেলল। বাম হাতে তার ব্যাগটা। তারপর দরজায় জটলা করে থাকা কিছু মানুষের  মধ্যে মাথাটা ঢুকিয়ে দিল এবং কোনো মতে ভেতরের অনেকগুলো শরীরের মধ্যে নিজের শরীরটাকে ঠেলে সেঁধিয়ে দিল। কারণ এখানে সারা দিন দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনো বাসে সিট পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই সেটা এ কয়দিনে বুঝে গেছে সে। দাঁড়িয়েছে ড্রাইভারের পেছনে মহিলা আসনের সামনেই। কপালজোরে মিনিট পনের পরেই একটা আসন খালি হয়। সে বসতে যাবে তার আগেই একজন পুরুষ সুকৌশলে শরীর বাঁকিয়ে দখল নিল সেই মহিলা সিটের এবং আগে থেকেই বসা দুই পাশের দুই মহিলার নিতম্বের মাঝখানে ঠেলে নিজের নিতম্বখানা ঢুকিয়ে বসার জায়গাটা করে নিল। কন্ডাক্টর একবার বলল, ‘মামা মহিলা সিট ছাড়েন।’ কিন্তু তাতে কোনো ভাবান্তর নেই সেই লোকের। বরঞ্চ একটা চালাক চালাক দৃষ্টি দিয়ে সায়মাকে দেখছে সে। সায়মা দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুড়িয়ে নিল।

আস্তে আস্তে যানজট ঠেলে ঠেলে মহাখালি ওয়ারলেস গেটে এসে আটকে আছে বাসটি। আটকে আছে তো আছেই। কতক্ষণ আটকে আছে সেটার হিসাব করতে চায় না সায়মা। তাতে অফিসে সময় মতো পৌঁছতে পারবে কি পারবে না সেই টেনশন বেড়ে যায়। তাই ঘরি না দেখে মনোযোগটা অন্যত্র সরিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কেউ কেউ কন্ডাক্টরকে খুঁজছে। ভাড়াটা ফেরত নিয়ে হেঁটেই চলে যাবে। কিন্তু কন্ডাক্টর কোথায় লাপাত্তা। চালকের সিটে বসে চালক দেয়াশলাইয়ের কাঠির এক মাথা দিয়ে আয়েস করে দাঁত খোঁচাচ্ছে। আবার একটু পরই আরেক মাথা দিয়ে কান চুলকাচ্ছে। আর  থেমে থেমে সিগারেটে লম্বা টান দিচ্ছে। গাড়ির একমাত্র ফ্যানটা তার মাথার ওপর ঘুরছে। এদিকে যদিও যাত্রীরা ঘেমেনেয়ে একাকার।  প্রচন্ড গরমে গাড়ির ভেতরে আর কোনো কোনো ফ্যান নেই। আর সিটগুলি এমন নোংড়া যে তাকালে বমি আসে। সেদিকে না তাকিয়ে থাকতে আশপাশে দৃষ্টি দেয় সায়মা। এদিকে আশপাশে যেদিকে তাকায় দেখে জোড়ায় জোড়ায় চোখ তাকে তার দিকে চেয়ে আছে। শরীরের সাথে লেপ্টে থাকা মানুষগুলোর গা থেকে বের হচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ। সায়মা প্রাণপণে মনোযােগটা অন্যত্র সরিয়ে রাখতে চায় কিন্তু পারে না। গন্ধটা নাকে আসেই। আসনগুলো যেন নোংড়া দাঁত বের করে তাকে উপহাস করে। কামাতুর লোকগুলো লকলকে জিহবা বের করে চোখের দৃষ্টি দিয়ে যেন তাকে ধর্ষণ করে যাচ্ছে অনবরত। ঘেমেনেয়ে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকা কাপড় যেন তাকে চেপে ধরে দম বন্ধ করে দিতে চায়।

অবশেষে পথটুকু ফুরায়। পাঁচ ছয় কিলোমিটার পথ আড়াই ঘন্টায় ঘন্টায় অতিক্রম করে বাসটি গুলশান এক নম্বর গোল চক্করে পৌঁছে। প্রথম দিন গুগল ম্যাপে চেক করেছিল সায়মা। গুগল ম্যাপ বলছিল- হেঁটে গেলে এক ঘন্টা বাইশ মিনিট লাগবে। আর গাড়িতে গেলে তেইশ থেকে সাতাশ মিনিট। সেই পথ অতিক্রম করল আড়াই ঘন্টায়। বাস থেকে নামার পর সায়মার মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেল কথাটা-‘হে ঈশ্বর! কেন এমন একটা দেশে জন্ম দিলে!’ তারপর  সায়মা সিদ্ধান্তটা নিয়েই  নিল। আজই রিজাইন দিবে চাকরী থেকে। তারপর চলে যাবে আমেরিকাতেই। অধ্যাপক রবার্ট ইমেইলে পোস্টডক্টরাল করার  স্কলারশীপের যে অফারটা পাঠিয়েছেন আপতত সেটাই লুফে নিবে সায়মা।


  • Loging for Like
  • মোট পছন্দ করেছেন 0 জন
  • মন্তব্য 4 টি
  • গল্প


  • অাট কুঠুরি নয় দরজা
  • ট্রাফিক পুলিশ এবং বউ বনাম গাড়ি
  • এভাবেই হয়
  • অনির্বচনীয় অনুভূতি ........ গল্প
  • গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ১৪৫৩ বঙ্গাব্দ
  • খন্দকার অাবদুল মজিদ ও তাঁর রহস্যময় রাত

অাট কুঠুরি নয় দরজা

 স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিল ইউনাইটেড স্টেট এ। সেখানে  পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে মাস তিনেক হয় দেশে ফিরে এসেছে সায়মা। দেশে এসে একটা  চাকরীও নিয়েছে।  ঢাকার গুলশানে একটা প্রাইভেট কমার্শিয়া

ট্রাফিক পুলিশ এবং বউ বনাম গাড়ি

 স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিল ইউনাইটেড স্টেট এ। সেখানে  পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে মাস তিনেক হয় দেশে ফিরে এসেছে সায়মা। দেশে এসে একটা  চাকরীও নিয়েছে।  ঢাকার গুলশানে একটা প্রাইভেট কমার্শিয়া

এভাবেই হয়

 স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিল ইউনাইটেড স্টেট এ। সেখানে  পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে মাস তিনেক হয় দেশে ফিরে এসেছে সায়মা। দেশে এসে একটা  চাকরীও নিয়েছে।  ঢাকার গুলশানে একটা প্রাইভেট কমার্শিয়া

অনির্বচনীয় অনুভূতি ........ গল্প

 স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিল ইউনাইটেড স্টেট এ। সেখানে  পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে মাস তিনেক হয় দেশে ফিরে এসেছে সায়মা। দেশে এসে একটা  চাকরীও নিয়েছে।  ঢাকার গুলশানে একটা প্রাইভেট কমার্শিয়া

গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ১৪৫৩ বঙ্গাব্দ

 স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিল ইউনাইটেড স্টেট এ। সেখানে  পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে মাস তিনেক হয় দেশে ফিরে এসেছে সায়মা। দেশে এসে একটা  চাকরীও নিয়েছে।  ঢাকার গুলশানে একটা প্রাইভেট কমার্শিয়া

খন্দকার অাবদুল মজিদ ও তাঁর রহস্যময় রাত

 স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে গিয়েছিল ইউনাইটেড স্টেট এ। সেখানে  পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে মাস তিনেক হয় দেশে ফিরে এসেছে সায়মা। দেশে এসে একটা  চাকরীও নিয়েছে।  ঢাকার গুলশানে একটা প্রাইভেট কমার্শিয়া






  • আর এভাবেই হয়তো আমাদের মেধাগুলো পাচার হয়ে যাচ্ছে ভিন দেশে

    • হুম .....সেটাই

      হামিদ অাহসান
      2015-11-13 05:58:58
    • kiss

      হামিদ অাহসান
      2015-11-13 05:57:22
চয়নিকা মননশীল সাহিত্যচর্চার একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র। এখানে প্রদত্ত প্রতিটি লেখার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ লেখকের নিজের।
Choyonika.com