ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ, অগি্নকন্যা খ্যাত বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানি। মায়ের নাম ছিল প্রতিভা দেবী। পরিবারের ৬ ভাই বোনের মাঝে প্রীতিলতা ছিলেন ২য়। প্রীতিলতার ডাকনাম ছিল রাণী। অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর পড়াশোনার হাতে খড়ি হয়েছিল মা-বাবার কাছেই।
তাঁকে ডা. খস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে সরাসরি ৩য় শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়েছিল। পড়াশুনায় তিনি মেধার সাক্ষর রেখে ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তিপান তিনি। ওই স্কুল থেকে ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন প্রীতিলতা। এরপর ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। কলেজে পড়া অবস্থায় লীনানাগের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। নীলা নাগ ওই সময়ে দীপালী সংঘের নেতৃত্বে ছিলেন। শিক্ষা জীবনে প্রীতিলতা সমফলতা অর্জন করেন। ১৯৩০ সালে সারাদেশে ৫ম ও মেয়েদের মধ্যে স্থান অধিকারে করে আইএ পাস করেন। এরপর কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে ডিসটিঙ্কশনসহ বিএ পাস করেন।
বিপ্লবী নেতা মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে অস্ত্রলুট, রেললাইন উপড়ে ফেলা, টেলিগ্রাম-টেলিফোন বিকল করে দেওয়াসহ ব্যাপক আক্রমণ হয়। এই আন্দোলন সারাদেশের ছাত্র সমাজকে উদ্দীপ্ত করে। এই আক্রমণ চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ নামে পরিচিতি পায়। চাঁদপুরে হামলার ঘটনায় বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির আদেশ হয়। তিনি যখন আলীপুর জেলে বন্দি তখন প্রীতিলতা রামকৃষ্ণের বোন পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতেন। রামকৃষ্ণের প্রেরণায় প্রীতিলতা বিপ্লবী কাজে আরও বেশি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৩১ সালে ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণের ফাঁসি হবার পর প্রীতিলতা আরও বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন।
ঠিক ঐ সময়েই তখনকার আরেক বিপ্লবী কন্যা কল্পনা দত্তের সঙ্গে পরিচয় হয় প্রীতিলতার। বিপ্লবী কল্পনাদত্তের মাধ্যমে মাস্টার দার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন প্রীতিলতা। ১৯৩২ সালের মে মাসে প্রীতিলতার দেখা হয় মাস্টারদা ও বিপ্লবী নির্মলসেন এর সঙ্গে। তাদের কাছ থেকিই অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ লাভ করেন তিনি।
১৯৩২ সালে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। ওই বছর ১০ আগস্ট আক্রমণের দিন ধার্য করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে নারী বিপ্লবীদের নেতৃত্বে আক্রমণ হবার কথা হয়। আর নেতৃত্বে থাকে কল্পনাদত্ত। কিন্তু আক্রমণের আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কল্পনাদত্ত। তাই নেতৃত্ব দেয়া হয় প্রীতিলতাকে। ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে সফল হন বিপ্লবীরা। প্রীতিলতা সে দিন পুরুষের বেশে আক্রমণ যোগ দেন। জরী হয়ে নিরাপদ আশ্রায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন প্রীতিলতা। এই অবস্থায় ধরা পড়ার আগেই সঙ্গে থাকা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহুতি দেন তিনি।
বিপ্লবী আন্দোলনের পাশাপাশি নারীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও সোচ্চার ছিলেন প্রীতিলতা। শেষ মুহূর্তেও তিনি বলেছিলেন নারীরা আজ কঠোর সংকল্প নিয়াছে যে আমার দেশের ভাগিনীরা আজ নিজেকে দুর্বল মনে করিবেন না। মাত্র ২১ বছরের জীবন পেয়ে তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। ছোট্ট একটি কর্মময় জীবন দিয়ে আজও তিনি অনেকের অণপ্রেরণার আসনটি গ্রহণ করে আছেন।