কলাপাতা, ফুল, ধান-দূর্বা, মাটির প্রদীপ, ঘি, ডাব ও দুধের পসরা সাজিয়ে বসে আছে বিক্রেতারা। যত পশ্চিমে হেলে সূর্য, ততই বাড়তে থাকে ভিড়। দুধ ঢেলে, আগরবাতি জ্বালিয়ে উৎসবের সূচনা করে নারীরা। বাড়ি থেকে আনা ফলমূল কিছুক্ষণের জন্য রাখা হয় লোকনাথের মূর্তির সামনে। তারপর সেগুলো নিয়ে উন্মুক্ত ময়দানে সারিবদ্ধভাবে বসে যায় সবাই। সামনে কলাপাতার ওপর রাখা হয় ঘিয়ের প্রদীপ। বিপদ থেকে রক্ষার জন্য যে কয়জন আপনজনের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়, গুনে গুনে সেই ক’টি প্রদীপই রাখা হয়। দুই-চার-দশ-বিশটা পর্যন্ত প্রদীপ দেখা যায়। চারপাশে সাজানো থাকে নানা রঙের কাটা ফল। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে বেজে ওঠে ঘণ্টা। উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে সবাই একযোগে জ্বালাতে শুরু করে প্রদীপ। একসঙ্গে জ্বলে ওঠে শত শত প্রদীপ। ওপর থেকে দেখা সেই দৃশ্য অনির্বচনীয়। এলাকাজুড়ে শুরু হয় এক আলোর নাচন। প্রদীপ জ্বালানো শেষে ভাঙা হয় সারাদিনের উপবাস। আপনজনের কল্যাণ কামনা করে এই উপবাস করে লোকনাথভক্তরা। কলেরা-বসন্তের হাত থেকে বাঁচার জন্য কার্তিক মাসে উপবাস পালন এবং আশ্রম প্রাঙ্গণে ঘিয়ের প্রদীপ ও ধূপ-ধুনা জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা লোকনাথ। সেই থেকে সোনারগাঁওয়ের বারদী লোকনাথ আশ্রমে প্রতি বছর কার্তিক মাসে হয় এই উৎসব। ‘রাখের উপবাস’ নামে পরিচিত এই অনুষ্ঠানকে কেউ কেউ ‘কার্তিক ব্রত’ও বলে থাকে। ১৫ থেকে ৩০ কার্তিক এই ১৫ দিনের প্রতিটি শনি ও মঙ্গলবার এই ব্রত অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
(২) সকাল বেলা বারদী লোকনাথ আশ্রম।
(৩) বাবা লোকনাথের সমাধি মন্দির
(৪/৫) কার্তিক ব্রত অনুষ্ঠান পালনের জন্য সন্ধ্যার অনেক আগেই লোক চলে আসে ভালো স্থানে বসার জন্য।
(৬) সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালানোর প্রস্ততি হিসাবে আস্তে আস্তে মোম বাতিগুলো জ্বলে উঠছে।
(৭/৮) এবার ঘন্টা বেজে উঠেছে, আর ঘিয়ে ভড়া মাটির প্রদীপগুলো জ্বলে উঠছে….
(৯/১০) যত অন্ধকার হতে লাগলো, জ্বলন্ত নারকেলের খোসা হইতে উদঘ্রীত ধোয়া আর ঘি দেওয়া মাটির প্রদীপের আলো যেন এক আধ্যাত্মীকতার সৃষ্টি করতে লাগলো।
(১১) একসময় পাত্রের ঘি শেষ হলো, আর শেষ হলো আলোর মিছিল, অতপরঃ ভোজন পর্বের মাধ্যমে উৎসবের পরিসমাপ্তি।