কোন একটি বিষয় লিখতে গিয়ে হঠাৎ করে আমাদের কারো কারো হোচট খেতে হয়, মনে হয় আমি যা লিখতে বসেছি তা একজন লেখক আগেই লিখে ফেলেছেন বা একজন কবি, এমনটা মনে হওয়ার পিছনে অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ হলো, যেমন ধরা যাক রবীন্দ্রনাথে শেষের কবিতার বিখ্যাত কবিতাটির কয়েকটি লাইন মনের মধ্যে গেঁথে থাকা যেমন,
"যে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।"
একজন মানুষ ভালো মন্দ মিলায়ে এই রকম একটি ব্যাখ্যা দিতে চাইলে শুধু রবীন্দ্রনাথের ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি - এই কথাটি মনের মধ্যে উঁকি ঝুঁকি দিতে থাকে আর ঐ বিষয়ে তখন আর লেখা হয় না, মনে হতে থাকে লেখাটা নকল হয়ে যাচ্ছে।
কোন লেখক এই এ বৃত্তের মধ্যে পড়লে সে লেখকের উচিত হবে ঐ বৃত্ত থেকে বের হয়ে এসে নিজের তৈরী করা একটি ধারায় লেখা শুরু করা। যেমন " ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি " এমন একটি ভাবের মধ্যে লেখা যায় যেমন, লিখতে শুরু করি - আমার মধ্যে শুধু ভালো দিকগুলি দেখার দরকার নেই, প্রয়োজনে আমার মন্দ দিকগুলিও দেখ বা আমার মন্দ দিকগুলি খুঁজে বের করার চেষ্টা কর, মানুষের মধ্যে একটি প্রবনাতা আছে নিজের ভালো দিকগুলি অন্যের প্রতি প্রকাশ করা আর মন্দ দিকগুলিকে ঢেকে রাখা। মন্দকে বাদ দিতে চাইলে ভালোর দেখা মিলবে না আবার ভালোকে বাদ দিতে গেলে মন্দকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই আমি বলি আমি ভালো মন্দের সংষ্পর্শে একজন মানুষ।
কিম্বা অন্য ধারায় কবিতার ভাষায় লিখা যায়--
" আমাকে তুমি দেখেছিলে ভালোর নৌকাতে
দেখ নি কী আছে আমার মন্দের কৌটাতে "
রবীদ্রনাথে অনেক আগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সমাধি-লিপি কবিতায় লিখেছেন-
" ( জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি
বিরাম ) "
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সংগীতে লিখেছেন--
" শিশু যেমন মাকে নামের নেশায় ডাকে,"
এই দুই জন মহা-কবি এক লাইনের একটি বাক্যে শিশুর সাথে মায়ের তুলনা, বন্ধন বা উপমা টেনেছেন একই ভাবে তবে এটা কখনই বলা যায় না যে, মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি লাইন " ( জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম ) " রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একই ভাবে গানে লিখেছেন " " শিশু যেমন মাকে নামের নেশায় ডাকে,"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত গানে লিখেছেন
" মেঘের পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে ।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ একা দ্বারের পাশে ।।"
আষাঢ় বা শ্রাবণের আকাশের বর্ণনার সাথে মনের ব্যকুলতা প্রকাশ করে কবিতার লাইন যে লেখা যাবে না এমন তো নয়, লেখা যেতে পারে ভাবে, অন্য পেক্ষাপটে, অন্য ধারায় যেমন,
শ্রাবণের আকাশে আজ যেমন মেঘের পরে মেঘ
তেমন করে প্রকাশ হল আমার মনের আবেগ।